সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রতিবাদে রাজ্যজুড়ে যে গণজাগরণ সাড়া ফেলে দিয়ে তা নি:সন্দেহে নজিরবিহীন। প্রতিমূহুর্তে তা ইতিহাস রচনা করার ক্ষমতা রাখে৷ কিন্তু কতগুলো প্রশ্ন এইসময় মাথা চাড়া দিয়ে তাদের অস্তিত্ব জানান দিচ্ছে, সেগুলো এক এক করে বলে ফেলা জরুরি।

১. এই চলমান আন্দোলনের কর্মসূচিতে মানববন্ধন বা আলো নিভিয়ে প্রতীকী প্রতিবাদের ভাষ্য এটিকে বড্ড বেশি করে আনবান সিভিল সোশ্যাইটি মুভমেন্টে পরিণত করছে, যেখানে জাস্টিস নামক ট্রেন্ডই মুখ্য, কিন্তু জাস্টিস তো মুড়ির মোয়া নয়, চাইলেই রাষ্ট্রশক্তি সেটাকে হাতের মুঠোয় তুলে দেবে! সেখানে এই প্রচ্ছন্ন ট্রেন্ড সুলভ আনন্দোলনমুখরতার ভবিষ্যৎ কি? রাষ্ট্রকে চাপ না দিলে, র‍্যাডিকাল মুভমেন্ট ছাড়া নেচে গেয়ে সুখী সুখী আন্দোলন সুখ গায়ে মেখে মানুষের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ কে বার করে দেওয়া যায় শুধু তাকে পুঞ্জীভূত করে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা যায়না৷

২. জাস্টিস চাওয়ার পাশাপাশি নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গের মানুষদের যে ১২ দফা দাবী রয়েছে, সেই প্রসঙ্গ দৃঢ ভাবে উঠে আসা প্রয়োজন প্রত্যেকটি জমায়েতে, প্রত্যেকটি সংগঠিত মিছিলে, এই গণআন্দোলনকে একই সাথে নারী ও প্রান্তিক লিঙ্গের অধিকার আদায়ের আন্দোলন হয়ে উঠতে হবে। তা না হলে যে রেপ কালচার, ভিক্টিম ব্লেমিং এর সংস্কৃতি সোস্যাইটিতে বাসা বেঁধে আছে, তাতে নাড়া পরবে খালি, সেটাকে নিরঙ্কুশ করা যাবেনা।

৩. গণআন্দোলনের একটা নিজস্ব পালস থাকে, সে তার চরিত্র নিজেই ঠিক করে নেয়। কিন্তু যথাযথ রাজনৈতিক নেতৃত্ব ছাড়া কি সেটা সম্ভব? এত বিক্ষিপ্ত, এত বিচ্ছন্ন কার্যক্রম মানুষকে কিছুদিন পর হাঁপিয়ে তুলবে, কিন্তু এই গণ অভ্যুত্থান যে স্ফুলিঙ্গ তৈরি করলো সেটা যথাযত রাজনৈতিক নেতৃত্ব পেলে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে অনুঘটকের ভূমিকা নিতে পারে। তা না হয়ে যদি এত ক্ষোভ প্রকৃত অর্থে চ্যানেলাইজ হবার আগেই নিভে যায়, প্রতীকী প্রতিবাদে জর্জরিত হয়ে তার চেয়ে ব্যর্থতা আর কিছুতে নেই।

৪. এই গণজাগরণে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যে স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে বিজেপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে, সেটা একমাত্র আশার আলো। পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের সুপ্রিমো যে সিবিঅাই তদন্তের বিরোধিতা করে এসেছে সবসময় সে এবারে বিনাবাক্য কেনো রাজি হয়ে গেলো? কেন্দ্রীয় সরকারের পোষা সংস্থা সিবিআই এর তরফেও বা কতটা নিরপেক্ষ তদন্ত আশা করা যায়, সিবিআই কে কেন্দ্র করে রাজ্য কেন্দ্রের সেটিংবাজির ইতিহাস তো খুব পুরনো নয়। নিরপেক্ষ বিচার পাওয়ার এই আশা টা খুব বেশি করে গিমিকি মনে হচ্ছে।